১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির সামনের মাঠ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে পাকা ভবন পর্যন্ত এসে পড়েছে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙণ ঠেকানোর চেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা হবে কী না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ দাবি করে স্থানীয়রা নারায়ণকোলা এলাকায় মৃগী নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও ঐতহ্যবাহী স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন।
সরজমিনে ইউএনবির এই প্রতিনিধি গিয়ে দেখেন, এরই মধ্যে স্কুল মাঠের দুই তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীর উত্তর তীরের ব্যাপক ভাঙনে স্কুলের দু’টি ভবনের মধ্যে নতুন ভবনের দক্ষিণ পাশের পেছনের অংশের মাটি সরে গেছে। ফলে ভিত্তির ২টি পিলার বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে। ভাঙন না কমলে যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পারে। স্কুলের পাশ্ববর্তী নদীর উত্তরপাড় ভাঙন রোধ ও স্কুল ভবনটিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে কাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও অবশিষ্ট মাঠ নদীর গর্ভে চলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে আপাতত ১২৫ কেজি করে বালু ভর্তি ৮ হাজার ১৫০টি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।
নারায়নখালা এলকার বাসিন্দা নকলা হাজী জালমামুদ কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক শরিফ আহমেদ বলেন, ৩০/৪০ বছর ধরে নদী ভাঙনে আমাদের এ অঞ্চলের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৫/৭ বছর ধরে তীব্র ভাঙনের জন্য ২ বার প্রাইমারি স্কুল সরানো হয়েছে। আবারও হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থায়ী ব্লক করে নদীর তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী ভাঙনের হাত থেকে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, ঊর্বর আবাদী জমি রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানান তিনি।
নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার জানান, নদী ভাঙনের ফলে ২০১৯ সালে মাঠের কিছু অংশ ভেঙে পানিতে মিশে গেছে। এ বছর বর্ষার শুরু হতেই ভাঙন শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন নামে একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি স্কুলের নামে নতুন করে প্রয়োজনীয় জমি দিয়েছেন। ২০১৯ সালে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, নতুন ভবন নির্মাণের কাজেএখনো শুরু হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং জামালপুর সদর ও শেরপুর সাব-ডিভিশনের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈমুর হোসেন জানান, এ বছর নকলার চরঅষ্টাধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা এলাকায় ভাঙন রোধে নদীর তীরে ৫০০ মিটার এলাকায় বালুর জিও ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
নকলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছা জানান, বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত নারায়খোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দু’টি ভবনের মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা ভবনটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বাকি ভবন ও অবশিষ্ট মাঠ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। তাছাড়া নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।